গোপালের ঘরে চুরি - BD News Times 24

Breaking

adop

Post Top Ad News

বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

গোপালের ঘরে চুরি

গোপালের স্ত্রী বেজায় বুদ্ধিমতী। সে ডাকাতদের বলল, বাড়ির কর্ত্তা তোমাদের ভয়ে টালির চালের ওপর বসে রয়েছে। তার কাছেই সিন্দুকের চাবি আছে।

গোপাল ভাঁড় তখনও পাকাবাড়ি করতে পারেনি। মাটির দেয়াল, টালির ছাউনি। আগে গ্রাম দেশে চোরেরা সচরাচর হয় সিঁধ কাটত, নতুবা ঘরের চালের দু-একখানা টালি সরিয়ে ঘরে নেমে মালপত্র নিয়ে অন্য দরজা দিয়ে পালিয়ে যেত। তখন মাঝরাত, একটা চোর চুরি করবে বলে গোপালের ঘরের টালির ওপর সবে উঠছে। গোপাল ও গোপালের স্ত্রী তখনও জেগে ছিল। 

চোর সবে একখানা টালি সরিয়েছে, আর একখানা সরিয়ে নিচে নামবে আর কি। গোপাল টের পেয়ে তখন স্ত্রীকে সাবধান হতে বলল। অন্যদিকে গোপালের বাড়িতে ঠিক এই সময়েই হা রে রে রে করে বিরাট ডাকাতদল চড়াও হলো। ডাকাতরা দরজা ভেঙে ঢোকার আগেই গোপাল টাকা-পয়সা ও গয়নাগাটি নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বৌকে সাবধান করে বাগানে পালিয়ে গেল। 

বিজ্ঞাপন

চোর ব্যাটা কিন্তু আর পালাতে পারল না- সে টালির চালে বসেই ঠক-ঠকিয়ে কাঁপতে লাগল।


বউ সব বুঝতে পেরেছে যে চালের ওপর একজন কেউ আছে, ওর উপস্থিতি ডাকাতদল আসার আগেই হয়েছে- গোপাল বউকে সে জন্য সাবধান করে দিয়েছে কী করতে হবে। কাঠের দরজা ভেঙে ডাকাতরা ঘরে ডুকেই গোপালের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করল, বাড়ির কর্ত্তা কোথায় আগে বল, নইলে তোকেই রাম ধোলাই দেব। মিথ্যে কথা বললেই খুন করব, তাড়াতাড়ি বল।


গোপালের স্ত্রী বেজায় বুদ্ধিমতী। সে ডাকাতদের বললে, বাড়ির কর্ত্তা তোমাদের ভয়ে টালির চালের ওপর বসে রয়েছে। তার কাছেই সিন্দুকের চাবি আছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না গো, তোমাদের পায়ে পড়ি গো। আমাকে মেরো না গো বাছারা সব!


ডাকাতরা চোরকে চাল থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, সিন্দুকের চাবি কোথায় শিগগির বল, কোথায় আছে? না হয় তোকে মেরে ফেলব। হারামজাদা কোথাকার। চোর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, সত্যি বলছি, মাইরি বলছি- আমি কিছুই জানি না। আমি এ বাড়ির কেউ নই, আমি নতুন লোক। ডাকাতরা চোরের কথা মোটেই বিশ্বাস করলে না, তাকে বাড়ির কর্ত্তা ভেবে চাবি আদায় করার জন্য নির্দয়ভাবে পেটাতে লাগল। তবুও চাবি পেল না কোনোমতেই। এতে খানিকক্ষণ দেরিও হয়ে গেল ডাকাতদলের। 

বিজ্ঞাপন 




ইতোমধ্যে গোপাল বাইরে থেকে গ্রামের লোকজন নিয়ে হৈহৈ করে আসতে থাকলে ডাকাতরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল বটে, কিন্তু চোরটাকে প্রায় মেরেই রেখে গেল। গোপাল আর একটু দেরি করলেই বেচারা প্রাণে মারা যেত সেদিন। 


পাড়াপড়শী ডাকাত তাড়াতে এসে মৃতপ্রায় চোরটাকে বাগে পেয়ে যেই মারতে যাবে, গোপালের স্ত্রী বাধা দিয়ে বললে, ওকে আর মেরো না গো, ওকে বাড়ির কর্তা বানিয়ে আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেলুম। আধমরা চোরটার ওপর খাঁড়ার ঘা আর দিও না। ও আমাদের অনেক উপকার করেছে।


তারপর গোপালের স্ত্রী যখন সব কথা খুলে বললে পাড়ার লোকেদের, তখন পাড়ার লোকেরা গোপাল ও গোপালের স্ত্রীর বুদ্ধির খুব প্রশংসা করতে লাগল। চোরটাকে গরম দুধ খাইয়ে চাঙা করে তুলে বিদায় করে দেওয়া হলো- বলা বাহুল্য যাতে চোরটা আর কোনো দিন চুরি না করে, তার জন্য সতর্ক করে দিয়ে এবং ব্যবসাপত্র করে সৎপথে চলার জন্য গোপাল কিছু টাকা ব্যবস্থা করে দিয়ে তাকে ছেড়ে দিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you Your comments are very important to us, thank you for staying with us